শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ

শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ: TIME ম্যাগাজিনের Sheikh Hasina and the Future of Democracy in Bangladesh এর বাংলা অনুবাদ-2024

  • Post author:
  • Post last modified:24 January 2024

Last updated on January 24th, 2024 at 02:18 pm

bangladesh prime minister sheikh hasina 1 1
বঙ্গ ভবনে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি TIME ম্যাগাজিন

শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবনের অভ্যর্থনা কক্ষে দামি রেশমি শাড়িতে ভাসছেন, এ যেন মখমলের দস্তানায় লৌহ মুষ্টির মূর্ত রূপ। ৭৬ বছর বয়সে ও রূপালী চুলের এই, বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী এমন একজন রাজনৈতিক ঘটনা ১৭ কোটি মানুষের এক জাতিকে যিনি গত এক দশকে সাদামাটা পাট উৎপাদনকারী থেকে এশিয়া-প্যাসিফিকের দ্রুততম প্রসারিত অর্থনীতিতে উত্থানের পথ দেখিয়েছেন।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের এক মেয়াদের পর, তিনি ২০০৯ সাল থেকে তার অফিসে অধিষ্ঠিত আছেন যা, তাকে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালনকারী মহিলা সরকার প্রধান এবং  ইসলামপন্থিদের পুনরুত্থান এবং এক সময়ের হস্তক্ষেপকারী সামরিক শক্তিকে পরাস্ত করার কৃতিত্বে ভূষিত করেছে। ইতিমধ্যে শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও লৌহ মানবী খ্যাত মার্গারেট থ্যাচার বা ভারতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর চেয়ে বেশি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি আগামী জানুয়ারিতে ব্যালট বাক্সে সেই দৌড় প্রসারিত করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। “আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমার লোকেরা আমার সাথে আছে,” সেপ্টেম্বরে টাইমের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন৷ “তারা আমার প্রধান শক্তি।”

কয়েক বছর ধরে হাসিনা যে ১৯টি গুপ্তহত্যার চেষ্টাকে অতিক্রম করেছেন তা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যানের সাক্ষ্যপ্রমাণ কম। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র সমর্থকরা নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যার ফলে শতাধিক গ্রেপ্তার হয়েছে, পুলিশের যানবাহন এবং গণপরিবহন আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে এবং বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার ভার হাসিনা  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে বিএনপি  ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ন্যায় আগামী নির্বাচনকে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। (তাদের অনুরোধের ঐতিহাসিক নজির থাকলেও সাংবিধানিক সংশোধনীর পরে তার আর প্রয়োজন নেই।)

হাসিনার আওয়ামী লীগের অধীনে বাংলাদেশ একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রের দিকে মোড় নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্যরা ব্যালট বক্স ভর্তি ও হাজার হাজার অলীক ভোটার সহ উল্লেখযোগ্য অনিয়মের জন্য গত দুটি নির্বাচনের নিন্দা করেছিল।  (শেখ হাসিনা যথাক্রমে ৮৪% এবং ৮২% ভোটে জিতেছিলেন।) আজ, খালেদা জিয়া, দুই বারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি নেত্রী, সন্দেহজনক দুর্নীতির অভিযোগে গৃহবন্দী হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে বসে আছেন। ইতিমধ্যে, বিএনপি নেতা-কর্মীরা বিস্ময়কর ৪০ লক্ষ আইনি মামলার শিকার হয়েছেন, অন্যদিকে স্বাধীন সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজও প্রতিশোধমূলক হয়রানির অভিযোগ করে। সমালোচকদের মতে, আগামী জানুয়ারির নির্বাচন হবে রাজ্যে রাজ্যাভিষেকএবং  স্বৈরশাসকের পক্ষে হাসিনার অভিষেকের সমতুল্য।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির বলেন, “শাসক দল রাষ্ট্রের সকল কলকবজা নিয়ন্ত্রণ করছে, হোক তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা বিচার বিভাগ।” বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির ভাঙচুর ও হত্যাসহ ৯৩টি মামলায় অভিযুক্ত এবং নয়বার কারাবরণ করেছেন। তিনি বলেন “যখনই আমরা আমাদের আওয়াজ তুলি, তারা আমাদের নিপীড়ন করে।”

বাংলাদেশে আসলেই একটি বড় বিষয়। দেশটি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের বৃহত্তম একক অবদানকারী এবং নিয়মিতভাবে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক সামরিক কমান্ড বা ছয় দেশীয় USINDOPACO ‘র সাথে অনুশীলনে যোগদান করে। দেশটি এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিচ্ছিন্ন প্রাণবন্ত জনগোষ্ঠী ব্যবসায়িক এবং শৈল্পিক সম্প্রদায়ের কাছে স্বকীয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশটির সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (FDI) সবচেয়ে বড় উৎস এবং বাংলাদেশি রপ্তানির শীর্ষ গন্তব্য। আর কয়েকজন উন্নয়নশীল বিশ্বের নেতাদের একজন হয়ে ইউক্রেনে ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসনের নিন্দা করার জন্য (দেরিতে হলেও), হাসিনা নিজেকে পশ্চিমাদের জন্য দরকারি প্রমাণ করেছেন, মোটেও প্রতিবেশী মায়ানমার থেকে শরণার্থী হয়ে আসা প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য নয়।

তবে স্বৈরাচারের দিকে বাংলাদেশের প্রবাহ নিয়ে ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত সর্বশেষ দুটি Summit for Democracy বা গণতন্ত্রের সমাবেশে হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবং নির্বাচনের ভিত্তিকে দুর্বল করে যে কোনো বাংলাদেশির জন্য দেশটি মে মাসে ভিসা বাধানিষেধ জারি করে। জবাবে, হাসিনা সংসদে বলছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে “গণতন্ত্রকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে”। তার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে হলে, বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস জোর দিয়ে বলেন, ওয়াশিংটন “পক্ষ বেছে না নেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক”।

কিন্তু এমন একটি সময়ে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যেক দিক থেকে চীনের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক পদচিহ্নকে মোকাবেলা করতে মরিয়া, তখন আমেরিকান সরকারি নীতির উচ্চবাক্য গুরুত্বপূর্ণ। ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাক্ট উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিদেশে   তার গণতন্ত্র-প্রচার নীতির জন্য বাংলাদেশকে পরীক্ষা ক্ষেত্রে পরিণত করেছে বলে মনে হচ্ছে। “বড় ঝুঁকি হচ্ছে এই সমস্ত চাপের বিপরীতমুখী ফলাফল  হবে এবং সরকারকে প্রতিজ্ঞাবব্ধ করে তুলবে  এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করতে প্ররোচিত করবে।”

হাসিনার টানা চতুর্থ মেয়াদ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কী অর্থ দাঁড়াতে পারে তা একটি মেরুকরণের প্রশ্ন। বেশিরভাগ আমেরিকানরা দেশটিকে শুধুমাত্র তাদের গেন্জিতে এবং প্যান্টে সেলাই করা লেবেল থেকে চেনে, কিন্তু এটি এমন একটি ধাতুগলানু পাত্র যা মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো দেশের চেয়ে বড় মুসলিম জনসংখ্যাকে দেশের ১০% হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং অন্যান্যদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘুর সাথে মিলিত করে।  সাংবিধানিকভাবে যদিও ধর্মনিরপেক্ষ, তবুও ১৯৮৮ সালে এক সামরিক স্বৈরশাসক ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মে রূপ দেয়, যা এমন একটি প্যারাডক্স তৈরি করে যা উগ্র মৌলবাদীদের জন্য উর্বর স্থান হিসেবে প্রমাণিত হয়।

হাসিনার অর্থনৈতিক অর্জন চিত্তাকর্ষক। বাংলাদেশ তার জনগণকে খাদ্য সরবরাহের সংগ্রাম থেকে ২০০৬ সালের ৭১ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ২০২২ সালের ৪৬০ বিলিয়ন  জিডিপি নিয়ে খাদ্য রপ্তানিকারকে উপনীত হয়েছে,যা দেশটিকে ভারতে পর দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। সামাজিক সূচকেও হয়েছে উন্নতি, বর্তমানে ৯৮% মেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করছে।  থেকে শুরু করে চীনের সাপ্লাই চেইন থেকে মুক্ত হতে স্যামসাং-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে অনুমতি দিয়ে বাংলাদেশ হাই-টেক উৎপাদনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মধ্য ঢাকার আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন “যখন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতার কথা আসে তখন আমাদের অবশ্যই উন্নতি করতে হবে”। “তবে আমরা অনেক দূর এগিয়ে এসেছি।”

বাংলাদেশ জলবায়ু সংকটেরও প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত দেশটি ১৯৭১ সালের গৃহযুদ্ধের অস্ত্রের অবিরত আওয়াজ এবং ধোঁয়ায় সৃষ্টি হলেও তবে পানিই এখানে হাজার বছর ধরে জীবনের উপর কর্তৃত্ব করেছে। সমুদ্র দূরবর্তী থেকে, সুউচ্চ হিমালয় থেকে চিত্তবিভ্রমজনক  ১৬৫ ট্রিলিয়ন গ্যালন তুষার গলিত বাংলাদেশের নদীগুলির মধ্য দিয়ে প্রতি বছর নির্গমন করে। আকাশ থেকে আসা ঘূর্ণিঝড় নিয়মিত ৮০% প্লাবনভুমি নীচু ব-দ্বীপকে আঘাত করে, যার ফলে বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষয়- ক্ষতি হয়। আর ক্রমবর্ধমানভাবে, ক্রমবর্ধমান সমুদ্রপৃষ্ঠের বৃদ্ধি আমেরিকার ইলিনয়ের চেয়ে ছোট অঞ্চলে কানায় কানায় পূর্ণ ক্যালিফোর্নিয়ার চেয়ে আয়তনে চারগুণ বেশি জনসংখ্যার জীবন ও জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলছে।

হাসিনা উন্নত দেশগুলির কাছে তাদের উন্নয়নশীল সমকক্ষদের জলবায়ু  resilience বা স্থিতিস্থাপকতার জন্য ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের দাবিতে বলিষ্ঠভাবে সমর্থন দিয়েছেন হয়েছেন, যে প্রতিশ্রুতি এখন অপূর্ণ রয়ে গেছে। তিনি বলেন “আমরা শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি পেতে চাই না, উন্নত দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।”

বাংলাদেশি জীবন পানির দ্বারা শাসিত হলেও এর রাজনীতি রক্তে প্লাবিত। গত অর্ধশতাব্দী ধরে, দুটি পরিবার এবং যে দুজন মহিলা তাদের নেতৃত্ব দেন তারা তিক্ত দ্বন্দ্বে আবদ্ধ। একপাশে আছেন শেখ মুজিব নামে পরিচিত ও বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি যাকে ১৯৭৫ সালে এক সেনা অভ্যুত্থানে ১৭ জন নিকটাত্মীয়ের সাথে খুন করা হয় সেই শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হাসিনা। ( সেই সময়ে হাসিনা ইউরোপে ছিলেন বলে সম্ভবত বেঁচে যান।) অন্যদিকে রয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রী খালেদা জিয়া। জিয়াউর রহমান মুজিবের গুপ্তহত্যা বা মৃত্যুর পর ১৯৮১ সালে তার নিজের মৃত্যু পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন।

এই উভয় রাজবংশীয় মাতৃতান্ত্রিক মহিলা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অন্যদের অবদানকে খাট করে তাদের পরিবারের ভূমিকা থেকে (রাজনৈতিক) বৈধতা আহরণ করে। এক প্রাক্তন জান্তা দ্বারা সৃষ্টিকে জোর দিয়ে হাসিনা বিএনপিকে একটি “সন্ত্রাসী দল” বলে উপহাস করেন, যে দলটি “কখনও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি”। অকপট বিদ্বেষের সাথে তিনি বলেন “খালিদ জিয়া একজন সামরিক স্বৈরশাসকের মতো শাসন করেছেন”।

তিনি ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর বিএনপি সমর্থকদের দ্বারা সৃষ্ট অগ্নিসংযোগের সহিংসতার দিকে আলোকপাত করেন। অন্য দিকে, বিএনপি তাদের দলের পদ্ধতিগত নিপীড়নের দিকে ইঙ্গিত করে এবং দলটির নেতৃবৃন্দেন বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগকে ইঙ্গিত করে। প্রকৃতপক্ষে, সব দিকেই রক্তপাত দুঃখজনকভাবে সাধারণ ব্যাপার। মানবাধিকার ওয়াচের এশিয়ার উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতি প্রায়ই রাজপথের সহিংসতাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে৷ “তা সমস্ত প্রধান রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে সত্য।”

হাসিনা তার সরকারের স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং আইডি কার্ড এবং বায়োমেট্রিক তথ্যের সাথে সম্পৃক্ত নিবন্ধন কাগজের প্রবর্তনকে অবাধ নির্বাচনের প্রতি তার অঙ্গীকারের প্রমাণ হিসাবে উল্লেখ করেন। তিনি তার DNA,তে গণতন্ত্র রয়েছে বলেও দাবি করেন। তার বাবার হত্যার পর হাসিনা এবং তার বোন শেষ পর্যন্ত ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার আগ পর্যন্ত পশ্চিম জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ( তিনি ১৯৬৭ সালে পদার্থবিজ্ঞানী এম. এ. ওয়াজেদ মিয়াকে বিয়ে করেন আর ২০০৯ সালে মৃত্যুর পূর্বে এই দম্পতির দুটি সন্তান গ্রহণ করে।)

কেবল ১৯৮১ সালেই হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয় যখন হাজার হাজার আওয়ামী লীগ সমর্থকরা তাকে ঘিরে ধরে এবং পরবর্তী বছরগুলি তিনি জনপ্রিয় নির্বাচন এবং সামরিক শাসনের অবসানের জন্য আন্দোলনে কাটিয়েছিলেন। । “তা আমাদেরই সংগ্রাম ছিল। “ভোটের অধিকার, খাবারের অধিকার। তা-ই ছিল আমাদের স্লোগান,” তিনি বলেন।

তবে চার দশক ধরে অনেক কিছু বদলে যেতে পারে আর আজ বাংলাদেশের বিরোধী দল গ্রেপ্তার, হামলা বা আইনি প্রতিরোধের ভয় ছাড়া রাস্তায় প্রচারণা করতে বা মিডিয়াতে নিজেদের প্রকাশ করতে না পারার অভিযোগ করে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কেবল নির্বাচনের দিনই গুরুত্বপূর্ণ নয়। তা হলো নির্বাচনের দিকে চালিত করা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া এবং পরিবেশ।”

১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে প্রতিটি নির্বাচনে ক্ষমতা বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে পালাবদল হয়েছিল, এবং পদাধিকারে থাকা সরকার বিরোধিতা বলে দেই যে  সুষ্ঠু ব্যালটে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে হাসিনাকে পরাজিত করার সমস্ত সম্ভাবনা রয়েছে। শুধুমাত্র ক্ষমতা বিরোধিতা মানে । “আজ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে,” ঢাকার রিকশা চালক TIME কে অভিযোগ করে বলেন যে, তার দৈনিক ৪০০ টাকা ($3.50) মজুরি দিয়ে তিনি তার স্ত্রী এবং দুই সন্তানের জন্য ভোজ্য তেল এবং মসুর ডালের খরচ মেটাতে পারে না। “হাসিনা এক মহান পরিবার থেকে এসেছেন কিন্তু আজ তার বাবা  আমাদের সাহায্য করতে পারছেন না।”

হাসিনার জন্য জ্বলন্ত সমস্যা হল যে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে তিনি সম্ভবত একই ধরনের দমনমূলক প্রতিশোধের সম্মুখীন হবেন যা তার সরকার বর্তমানে চালাচ্ছে। ঢাকা-ভিত্তিক সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ থিংক ট্যাংক এবং টক শো হোস্টের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, “আওয়ামী লীগ খুবই ভয় পাচ্ছে। তাদের কোনো নিরাপদ প্রস্থান নেই।”

বাংলাদেশের নিপীড়নমূলক নিরাপত্তা পটভূমি বৃহৎভাবে ২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ের ঘটনা দ্বারা গঠিত। বোমা, পিস্তল, অ্যাসল্ট রাইফেল এবং দা নিয়ে সজ্জিত হয়ে ৫ জন লোক রাত ৯:৪০ টায় ঢাকার অভিজাত গুলশান থানার হলি আর্টিজান বেকারিতে প্রবেশ করে, আশেপাশের দূতাবাস কর্মী এবং বাংলাদেশি অভিজাতদের জন্য তা এক জনপ্রিয় স্থান। “আল্লাহু আকবর” (“আল্লাহ মহান”) বলে তারা প্রধানত বিদেশি গ্রাহকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায় এবং গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। গ্রাহকরা টেবিলের নিচে লুটিয়ে পড়ে  যখন আতঙ্কিত স্টাফরা ছাদে পালিয়ে যায় বা বিশ্রামাগারে নিজেদের তালাবদ্ধ করে রাখে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, আক্রমণকারীরা অভিযোগ করেছিল যে পশ্চিমাদের ছোট পোশাক এবং অ্যালকোহলের স্বাদ “স্থানীয় লোকদের একই কাজ করতে উৎসাহিত করছে”। তারপর তারা কোরান তেলাওয়াত করতে পারে না এমন যে কোনো জিম্মিকে নির্যাতন ও হত্যা করে। অবশেষে যখন পুলিশ অভিযানের মাধ্যমে অবরোধ শেষ হয়, তখন প্রধানত স্থানীয়, ইতালীয় এবং জাপানি ও পাঁচজন সন্ত্রাসী ও দুইজন পুলিশ কর্মকর্তার পাশাপাশি মোট ২২ জন বেসামরিক  নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। আরও ৫০ জন, প্রধানত পুলিশ, আহত হয়।

 হিন্দু, বিক্ষাবিদ, ধর্মনিরপেক্ষ লেখক এবং ব্লগারদের লক্ষ্য করে বিগত ১২ মাসে ৩০টিরও অধিক সন্ত্রাসী আক্রমণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অবরুদ্ধ করে রাখা ISIS অনুপ্রাণিত ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের তীক্ষ্ণতার মাঝে তা ছিল সবচেয়ে মন্দ মুহূর্ত।  ভয়ের পরিবেশ এতটাই বিস্তৃত হয়ে উঠেছিল যে অনেক রেস্তোরাঁয় বিদেশি গ্রাহকদের ঢোকা নিষিদ্ধ ছিল যাতে তারা পুনরায় হামলা লক্ষ্য হয়ে না ওঠে। আজ যেখানে সেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল সেই বাহারী সড়কে গড়ে উঠেছে চটকদার দালান এবং একটি মেডিকেল ক্লিনিক। তবুও সেই সহিংসতার স্মৃতি এখনও হাসিনার নিরাপত্তামূলক দমননীতির বৈধতা প্রদান করে যা আজও অব্যাহত রয়েছে।

 ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের অধীনে বাংলাদেশ বৃহৎ পরিসরে ইসলামিকরণ শুরু করে। তার বিএনপি আজ তুলনামুলকভাবে অধিক রক্ষণশীল রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সাথে জোটবদ্ধ, যেখানে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। উইলসন সেন্টারের কুগেলম্যানের মতে, “ঢাকা জঙ্গিদমন প্রয়োজনীয়তাকে বিরোধী দলের ইসলামপন্থি উপাদানের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে দমন করার অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করেছে৷ জঙ্গি দমন আজ বিস্তৃত রাষ্ট্রীয় পরিসরের  দমন-পীড়নের মাধ্যমে অসততাকে ধামাচাপার দেওয়ার মাধ্যম হয়ে দাড়িয়েছে।  সাম্প্রতিক বিএনপির সমাবেশে পুলিশের পদক্ষেপকে “উসকানিমূলক … যা নিঃসন্দেহে প্রতিশোধের দিকে ধাবিত করেছে” বলে অভিহিত করেন গাঙ্গুলি।

তবে তা কেবল রাস্তায় পাথর এবং লাঠি নয়; বাংলাদেশের বিচার বিভাগ হাসিনার কথিত শত্রুদের সামান্য সমালোচনাকে ক্রমবর্ধমানভাবে লক্ষ্যবস্তু করেছে। ১৫ সেপ্টেম্বর, দুইজন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী যারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুম রহস্যকে অনুসরণ করেছিল অস্পষ্ট অভিযোগে তাদের দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে অযৌক্তিক অভিযোগে, যা মার্কিন সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট বিদেশি সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ্য প্রতিবাদের কারণ হয়, আর শিক্ষার্থীরাও হয়ে উঠেছে তাদের লক্ষ্য বস্তু।

আগস্টে, বারাক ওবামা সহ ১৭০ টিরও বেশি আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ এবং নোবেল বিজয়ী হাসিনার কাছে লেখা এক খোলা চিঠিতে বাংলাদেশের ২০০৬ সালের দারিদ্র্য নিরসনে ক্ষুদ্রঋণের পথপ্রদর্শক হিসেবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে “নিরবচ্ছিন্ন বিচার বিভাগীয় হয়রানি” বন্ধ করার জন্য হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান। হাসিনা ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন, দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার সহ ১৭৪টি অভিযোগ দায়ের করেছেন, যাকে তিনি “রক্তচোষা” বা  “bloodsucker” বলে উপহাস করেছেন।

এটি একটি উদ্ভূত বংশানুক্রমিক বিবাদ যা জ্বালাময়ী মানসিক বৈকল্যে উসকানিমূলক অভিযোগের জোগান দেয়। হাসিনা জোর দিয়ে বলতে পারেন যে তার রেকর্ড অনুকরণীয়—“খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, চাকরির সুযোগ,” তিনি অবলীলায় বলেন। “আমি তা করছি এবং আমি সেটিই করেছি”। তবে উপরিভাগের নিচে আচঁড়ালে বুঝা যায় যে অনেক কিছুর অবস্থা তেমন আশাব্যঞ্জক না।

গণতন্ত্র, রাজনৈতিক স্বাধীনতা আর মানবাধিকার সমস্যা নিয়ে কাজ করা ওয়াশিংটন ভিত্তিক Freedom House বাংলাদেশ ”আংশিক স্বাধীন” বলে বিবেচনা করে আর এর অর্থনীতি এখনও কৃষি, সস্তা পোশাক রপ্তানি এবং প্রতি বছর ১৪ মিলিয়ন-শক্তিশালী প্রবাসীর দ্বারা প্রতিবছর পাঠানো প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের উপর নির্ভরশীল। এই বৈদেশিক মুদ্রা অর্থনৈতিক চাপ কমাতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, বিশেষ করে  ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে যখন জ্বালানি তেল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে।

Transparency International’s Corruption Perceptions Index এর তথ্যানুযায়ী  বিশ্বব্যাপী ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৪৭ তম স্থানে রয়েছে-যা ইরানের সাথে একই পর্যায়ে আর তালেবান শাসিত আফগানিস্তানের এক স্থান উপরে। হাসিনা গর্ব বলেন যে বাংলাদেশে এখন “প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে মোবাইল ফোন আছে” এবং দেশটি ২০২৬ সালে জাতিসংঘের  শ্রেণীভুক্ত  স্বল্পোন্নত দেশের অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসার কথা।  কিন্তু যে কোনো দিক থেকে তা অত্যন্ত নিম্ন পরিমাপ; ততদিনে কেবলমাত্র মায়ানমার আফগানিস্তান এবং কম্বোডিয়াই হবে এশিয়ার অবশিষ্ট সদস্য দেশ ।

আর দেশের শান্তিপূর্ণ আর সৌন্দর্যমণ্ডিত গ্রামগুলির “ভিন্ন চিত্র” বলে হাসিনা যখন ঢাকার “বস্তিবাসী” সম্পর্কে তাচ্ছিল্যপূর্ণভাবে কথা বলেন, তখন প্রতিদিন কেন ২০০০ মানুষ গ্রামাঞ্চল  ছাড়ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। প্রায় দুই অঙ্কের মুদ্রাস্ফীতি সাধারণ বাংলাদেশিদের ক্ষতি করছে যেখানে নিম্নমুখী বৈদেশিক রিজার্ভ শিল্পকারখানার বাণিজ্য ক্ষমতাকে প্রভাবিত করেছে। স্থানীয় দুর্নীতি, শ্রম সমস্যা এবং মুদ্রা সংকটের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত হাস বলেন “ব্যবসা করার জন্য একটি এক কঠিন জায়গা, মার্কিন কোম্পানিগুলি তাদের সম্ভাব্য বিনিয়োগের জন্য আরও ডজনখানেক দেশের দিকেও নজর রাখছে … তাই বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিযোগী হওয়া সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।”

বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রোহিঙ্গা সংকটের দ্বারা মূর্ত হয়েছে। কক্সবাজারের সমুদ্রতীরবর্তী রিসোর্ট থেকে দক্ষিণে এক ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে গেলে দেখা মিলবে প্লাস্টিকের চাদরে আচ্ছাদিত বাঁশের কুঁড়েঘরগুলি এঁকেবেঁকে বয়ে চলা গ্রামাঞ্চল থেকে বেরিয়ে আসছে। কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের ভেতরে পশ্চিম মায়ানমারে সরকারি সংঘবদ্ধ নির্যাতন, হত্যা বা লুণ্ঠন থেকে পালিয়ে আসার পর প্রায় দশ লক্ষ রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা স্বল্প পরিসরে কোনো মতে জীবন ধারণ করছে, যাতে আনুমানিক ২৪,০০০ লোক প্রাণ হারায়। শিশুরা জীর্ণ ফুটবলে নিয়ে খেলা করে যখন নেকাব পরিহিত মহিলারা সমুচা আর টক বরইয়ের ব্যবসা করছে । যারা পালিয়ে এসেছে তারা তাদের সাথে হত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং ধর্ষণের গল্প ব্যতীত তেমন কিছু নিয়ে আসেনি ।

রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের সহানুভূতিশীল প্রতিক্রিয়ার অর্থ হল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন অন্যান্য মানবাধিকার উদ্বেগ সমূহ নিয়ে অনীহা প্রকাশ করে – এই উপেক্ষা একটি অন্ধ চোখ যা “অভ্যন্তরীণ চিত্র খুবই তীব্র না হলে এই সুচিন্তিত অন্ধ দৃষ্টি বা উপেক্ষা চলতেই থাকত” বলে মনে করেন গাঙ্গুলি। কিন্তু আজ,  ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা এবং জনহিতকর অবস্থার অবনতির অবস্থার সাথে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে পশ্চিমা চাপের সাথে  সম্পর্ক রয়েছে। ৫৪ বছর বয়সী শরণার্থী শরিফ হোসেন বলেন, “এখন আমাদের লোকেদের উপরে ফিরে যাওয়ার জন্য আরও বেশি চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। আমরা মরি বা বাঁচি, তাতে বাংলাদেশের কিছু যায় আসে না। তারা শুধু আমাদের জনগণকে তাদের ভূমি থেকে সরিয়ে দিতে চায়।”

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, হাসিনা বিশ্বকে মনে করিয়ে দেন যে “ছয়টি বছর আমার বোন আর আমি দেশের বাইরে শরণার্থী হিসাবে বাস করেছি, তাই আমরা তাদের দুঃখ এবং বেদনা অনুভব করতে পারি।” কিন্তু তার সরকার শরণার্থীদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং জীবিকা অর্জনের বৈধ উপায়ের অনুমতি দেওয়ার দাবিতে কান দেয়নি। বরং রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানানোর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। “তারা আমাদের জন্য একটি বড় বোঝা,” তিনি বলেন। “জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থা যারা এখানে রোহিঙ্গাদের সাহায্য করছে তারা মিয়ানমারের অভ্যন্তরেও একই কাজ করতে পারে।”

রোহিঙ্গা সংকট কখনই বাংলাদেশের একার সমাধান করার কথা  ছিল না,  আর অবশ্যই,আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এক সম্মিলিত দায় বহন করে। তবুও, তাদের দুর্দশা ঢাকা প্রতি আমেরিকান প্রভাব সম্পর্কে নতুন সন্দেহের জন্ম দেয়। ঐতিহাসিক বিশ্বাস ও মনোভাবও ভূমিকা পালন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছিল, যখন দেশটি  পাকিস্তানি জান্তার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে মূল্য দিয়েছিল ( সাবেক মার্ক পররাষ্ট্র সচিব নিক্সনের যে পাকিস্তান সম্পর্কে বলা উক্তি “আমাদের সবচেয়ে জোটবদ্ধ মিত্র” থেকে প্রতীয়মান হয়।

“ দেশভেদে  গণতন্ত্রের সংজ্ঞা ভিন্ন রকম হয়।”

– শেখ হাসিনা

আকার এবং ভৌগোলিক অবস্থানে আটকা থেকে বাংলাদেশ সুনিপুণভাবে ভারত, চীন এবং রাশিয়ার সাথে সংযোগ রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রেখেছে। যদিও আমেরিকার বিশেষ করে, স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে জনগণের মধ্যে সম্পর্কের একটি উল্লেখযোগ্য ইতিহাস রয়েছে, যেখানে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠানগুলি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং সুশীল সমাজকে আশ্রয় আমন্ত্রণ করে। ঝুঁকি হচ্ছে, ঢাকাকে খুব জোরে চাপ দেওয়া মানে ওয়াশিংটন থেকে দূরে এবং মস্কো ও বেইজিংয়ের কাছাকাছি ঠেলে দেয়। আজ পর্যন্ত, হাসিনা রাশিয়াকে ইউক্রেন থেকে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবকে সমর্থন ও বিরত  উভয়ই করেছেন। বিদ্রুপের ইঙ্গিত ছাড়াই হাসিনা বলেন “কিছু বিষয়ে আমরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেইনি; তারপরে অন্য কিছু বিষয়ে, আমরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেই। আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট।”

এটি এমন এক পন্থা যা ঢাকাকে প্রকাশ্যে কোনো পক্ষেরই বৈরিতাপূর্ণ না করে তুলার জন্য তৈরি করা হয়েছে। হাসিনা যেখানে বাংলাদেশে ৬৯ টিরও বেশি অনুমোদিত রাশিয়ান জাহাজকে ঢুকতে বাঁধা দিয়েছেন, সেখানে সেপ্টেম্বরে  প্রথম কোনো শীর্ষ রাশিয়ান কর্মকর্তা হিসেবে রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ পরিদর্শন করেছেন এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা রোসাটম (Rosatom) ঢাকার পশ্চিমে ৯০ মাইল অদূরে দেশের প্রথম পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে। ৬ অক্টোবর, বাংলাদেশ কেন্দ্রের জন্য রাশিয়ান ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান গ্রহণ করে, যা আগামী জুলাই মাসে আসার কথা রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য কাকে  দোষারোপ করা যায় সেই প্রশ্নে হাসিনা রাসায়নিক জবাব দেন: “তাদের সবার থামা উচিত। পুতিনকে থামানো উচিত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধে প্ররোচিত করা এবং অর্থ সরবরাহ করা বন্ধ করা উচিত। তাদের উচিত বাচ্চাদের সেই অর্থ দান করা।”

বাংলাদেশের কঠোর নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে হাসিনা পুনরায় রক্ষণাত্মক হয়ে আন্দোলিত ভঙ্গিতে তিনি বলেন যে “আপনি যাই কিছু করেন কিছু মানুষ সবসময় এর বিরোধিতা করে।” তা যে কোনও সমালোচনার অভ্যাসগত প্রতিবর্তী ক্রিয়া যদিও এর জন্য অধিক স্বস্তিদায়ক। আমাদের আলোচনার সময়, বিশেষ উদ্বেগগুলিকে অবিলম্বে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে এবং অন্তর্বীক্ষণের সুযোগ সমূহকে বরং পারিবারিক আঘাতের সেই অতল কূপের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একসাথে আমাদের দুই ঘণ্টা সময়ের মধ্যে হাসিনা তার খুন হওয়া বাবাকে বিনা বাধায় তুলে আনেন প্রায় ডজনখানেক বার।

অভ্যন্তরীণভাবে, তিনি মুজিবকে ঘিরে এক শ্বাসরুদ্ধকর ব্যক্তিত্বের প্রথা বা কাল্ট প্রচার করেছেন; আমাদের আলোচনার মাঝে “জাতির পিতা”র এক বিশাল প্রতিকৃতি আবির্ভূত হয়ে আছে, এবং তার গোঁফ সম্বলিত মুখাবয়ব প্রতিটি সরকারি অফিস এবং ওয়েবসাইটকে অলংকৃত করে। ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহির্গমন লাউঞ্জের ভেতরে, মেঝ থেকে সিলিং পর্যন্ত এক প্লাজমা স্ক্রীন উৎসুক দর্শকদের কাছে “জাতির পিতা”র ভাষণ চালিয়ে যাচ্ছে। হাসিনা বলেন, আমি এখানে শুধু আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে এসেছি।”

কিন্তু সেই স্বপ্ন এক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ছিল না। ১৯৭৫ সালে বিদ্রোহী সৈন্যরা তাকে হত্যার ছয় মাস আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি, মুজিব সমস্ত রাজনৈতিক দল ভেঙ্গে দিয়ে নিজেকে বাকশাল নামে পরিচিত একটি একদলীয় রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন, যা দৃশ্যত দেশকে জরুরি অবস্থার দিকে ধাবিত হতে  উৎসাহ দেয়। গণতন্ত্র আদৌ কখনও পুনরুদ্ধার করা যাবে কিনা তা এক বিবাদ সৃষ্টিকারী, যদিও সমালোচকরা ইতোমধ্যেই হাসিনার শাসনকে “বাকশাল ২.০” বলে অভিহিত করেছেন। এমনকি হাসিনা  মনে করেন বাংলাদেশকে এক ধূসর অঞ্চল বা শান্তি ও যুদ্ধের মাঝামাঝিতে স্থানে অবস্থান করছে: “দেশভেদে  গণতন্ত্রের সংজ্ঞা ভিন্ন রকম হয়।”

ব্যালট বাক্সের দিকে অগ্রসরমান কারও জন্য এটি খুব কমই শান্ত্বদায়ক দৃষ্টিকোণ। হাসিনা জানেন, তিক্ত ও ক্ষতবিক্ষত বিরোধিতা মানে ব্যর্থতা কোনো বিকল্প না। তিনি বলেন “কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে আমাকে উৎখাত করা এত সহজ না। “একমাত্র বিকল্প হল আমাকে নির্মূল করা। আর আমি আমার জনগণের জন্য মরতে প্রস্তুত।”

—  লন্ডন থেকে আস্থা রাজবংশী কর্তৃক প্রতিবেদিত


Sheikh Hasina and the Future of Democracy in Bangladesh (শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ) শিরোনামে ২ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে TIME ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রবন্ধটির বাংলা অনুবাদ

Romzanul Islam

Thinking out of the convention and moving forward with knowledge and reasons are always my styles. Researching, watching the best films, and reading and collecting the best books to enrich me is my deadly passion. Stoicism, liberalism, feminism and aversion to material success are my ideals.