man's search for meaning Bangla translation

Man’s Search for Meaning Bangla-ম্যান্স সার্চ ফর মিনিং জীবন বদলে দেওয়া Inspiring বইয়ের বাংলা অনুবাদ 2023

  • Post author:
  • Post last modified:24 January 2024

Last updated on January 24th, 2024 at 02:19 pm

একটি ঘটনা স্মরণ করছি। এক যুব চিকিৎসক তার ঘেমে যাওয়ার ভয় সম্পর্কে আমার সাথে পরামর্শ করেছিলেন। যখনই তার কোনো ঘেমে যাওয়ার প্রকোপ দেখা দিতো, এই (anticipatory anxiety) পূর্বাভাসজনি উদ্বেগ বা আশংকা প্রচণ্ডবেগে অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়ার কারণ হতো। এই আকৃতি গঠনকে ছিন্ন করতে আমি রোগীকে ঘাম হওয়ার মুহুর্তে তিনি কতটা ঘামতে পারেন তা মানুষকে দেখিয়ে সুচিন্তিতভাবে সমাধানের উপদেশ দিয়েছিলাম। এক সপ্তাহ পর তিনি আমাকে তার ফলাফল জানাতে ফিরে এসে বলেন যে যখনই তিনি তার পূর্বাভাসজনি উদ্বেগের সূত্রপাত করে এমন কারো সাথে সাক্ষাত করেন তখ তিনি নিজেকে বলেছিলেন, “আমি আগে কেবল এক কোয়ার্টার ঘামতাম, কিন্তু এখন আমি অনন্তত দশ কোয়ার্টার ঘাম ঝরাবো”! ফলাফল এমন ছিল যে, চারবছর ধরে ঘামের আতঙ্কে কাটার পর তিনি অবশেষে কেবল এক পর্বের চিকিৎসায় সে নিজেকে এক সপ্তাহর মধ্যে তা থেকে চিরতরে মুক্ত করতে সমর্থ হন।

পাঠকেরা লক্ষ্য করে থাকবে যে এই প্রক্রিয়া রোগীর মনোভাবের বৈপরিত্যের মধ্যে নিহিত, যতটা এক বৈপরিত আকাঙ্খা বা প্রত্যাশা দ্বারা তার ভয়ের স্থানাস্তরিত হয়েছিল। এই চিকিৎসার দ্বারা দুঃচিন্তার পাল থেকে হাওয়া বের করে নেওয়া হয়।

তবে, এমন একটি প্রক্রিয়াকে অবশ্যই সুনির্দিষ্টভাবে আত্ম-বিচ্ছিন্নতার জন্য রাসাত্ববোধে সহজাত মানব সামর্থকে ব্যবহার করেতে হবে। একজন মানুষের নিজেকে বিচ্ছিন্ন করণের এই সামর্থ বাস্তবায়িত হয় যখনই বৈপরিত অভিপ্রায় (paradoxical intention) নামক লগোথেরাপিউটিক পদ্ধতিকে প্রয়োগ করা হয়। একই সময়ে, রোগীকে তার নিজের স্নায়ুবৈকল্য থেকে নিজেকে দুরে রাখার সমর্থ করে তোলা হয়। এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি বিবৃতি পাওয়া যায় আমেরিকার মনঃবিজ্ঞানী গর্ডন ডব্লিউ. এ্যালপুর্ট এর বই, The Individual and His Religion এ: স্নায়ুবৈকল্য ব্যক্তি, যে নিজের কাছে হাসতে শেখে সম্ভবত সে আত্ম-পরিচালনার পথে আছে, সম্ভবত সুস্থ করতে”। [1]

এ্যালপুর্টের বিবৃতিতে বৈপরিত অভিপ্রায় (paradoxical intention) এ প্রায়োগিক বৈধতা এবং ক্লিনিকল প্রয়োগ রয়েছে।

এ পদ্ধতিকে আরও ব্যাখ্যার জন্য আরও কয়েকটি ঘটনার বিবরণ দেওয়া যায়। নিচে উল্লেখিত রোগী ছিলেন অনেক ডাক্তার দ্বারা ও কোনো থেরাপিউটিক সফলতা ছাড়াই কয়েকটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নেওয়া একজন হিসাবরক্ষক। যখন তাকে আমার হাসপাতাল বিভাগে ভর্তি করানো হয়েছিল, তখন তিনি ছিলেন প্রচণ্ড হতাশায় ও আত্ম-হত্যার কাছাকাছি ছিলেন বলে স্বীকার করেছিলেন। কয়েক বছর ধরে তিনি Writer’s cramp[2] রোগে ভুগছিলেন যা  সম্প্রতি এতই তীব্র হয়ে উঠেছিল যে তিনি তার চাকরি হারাতে বসেছিলেন। তাই, কেবল তাৎক্ষনিক থেরাপিই তার এই পরিস্থিতি প্রশমিত করতে পারে। চিকিৎসার শুরুতে, ডাক্তার ইভা কযডেরা রোগীকে প্রস্তাব করেন যে সে সাধারণত যা করেছিল ঠিক তার উল্টো কাজ করতে; যেমন, যতটা সম্ভব পরিষ্কার ও সুস্পষ্টভাবে লিখতে চেষ্টা করার পরিবর্তে, সে যেন যতটা সম্ভব সবচেয়ে খারাপভাবে হিজিবিজি লিখতে চেষ্টা করে। নিজেকে বলার জন্য তাকে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল, “এখন আমি লোকজনকে দেখাব আমি একজন কতো বাজে লেখক”! আর সেই মুহুর্তে যখন সে ব্যাপরোয়াভাবে হিজিবিজি করে লিখতে চেষ্টা করেছিল, তখন তার হিজিবিজি করে লিখা অসম্ভব হয়ে উঠে। “আমি হিজিবিজি করে লিখতে চেষ্টা করি, কিন্তু আমি তা কেবলই পেরে উঠছিলাম না”, পরের দিন সে বলেছিল। আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যেই রোগী এভাবে তার writer’s cramp থেকে মুক্ত করে, এবং চিকিৎসার পর পর্যাবেক্ষণ কালে তা থেকে মুক্ত থাকে। সে এখন পুরাটাই একজন সুখি মানুষ একং পরিপূর্ণভাবে কাজ করতে সমর্থ।

লিখতে সমস্যার পরিবর্তে, কথা বলার সমস্যা নিয়ে একই রকম ঘটনা সম্পর্কে ভিয়েনা পলিক্লিনিক হাসপাতের আমার এক সহকর্মি আমাকে বলেন। এটা ছিল এক তীব্র তোতলামীর ঘটনা যা তিনি তার বহু চিকিৎসা জীবনে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হন। তোতলামী ব্যক্তির মতে সে তার জীবনে কখনও কথা বলার সমস্যা থেকে এক মুহুর্তর জন্যও মুক্ত করতে পারেনি, একবার ছাড়া। ব্যপারটা ঘটেছিল তার বয়স যখন বারো বছর এবং এক ট্রাম বাসে চড়ার সময় সটকে পড়ে। বাসের কন্ডাক্টরের কাছে ধরা পড়লে, সে ভাবলো যে তা থেকে পালানোর একমাত্র উপায় হলো সহানুভুতি আদায় করা, আর তাই সে নিজেকে এক অসহায় রাস্তার ছেলে হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে। সে মুহুর্তে যখন সে তোতলাতে চেষ্টা করলেও পারে নি। অর্থহীন, সে বৈপরিত অভিপ্রায় বা (paradoxical intention) অনুশীলন করেছিল, যদিও থেরাপিউটিকল উদ্দেশ্যে নয়।

যাহোক, এই উপস্থাপনের প্রভাব এমনটা হওয়া উচিৎ নয় যে, বৈপরিত অভিপ্রায় বা (paradoxical intention) কেবল একক উপসর্গ যুক্ত রোগের ক্ষেত্রে কার্যকর। এই লগোথেরাপি পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে, ভিয়েনা পলিক্লিনিক হাসপাতালে আমার কর্মচারী সবচেয়ে মারাত্বক মাত্রার ও সময়ের মাত্রাতিরিক্ত বাধ্যকরণক্ষম স্নায়ুবৈকল্য (obsessive-compulsive neuroses) রোগে নিরাময় আনয়নে সফল হয়েছিল। উদহারণসরূপ আমি পঁয়শট্টি বছরের এক মহিলার কথা বলতে পারি যে ষাট বছর ধরে washing compulsion[3] বৈকল্যে ভোগছিল। বৈপরিত অভিপ্রায়ের মাধ্যমে ডাক্তার ইভা কযডেরা লগোথেরাপিউটিক চিকিৎসা শুরু করেন, আর দুই মাস পর রোগী স্বাভাবিক জীবন যাপনে সমর্থ হয়। ভিয়েনা পলিক্লিনিক হাসপাতালের স্নায়ুবিক বিভাগে ভর্তি হওয়ার পুর্বে রোগী স্বীকারোক্তি করেছিলো, “আমার জন্য জীবন ছিল নরকের মতো”। তার এহেন বাধ্যবাধকতা ও অতিরিক্ত জীবানু ভীতি আচ্ছন্নতার দরুন অক্ষম হয়ে পড়লে, সে গৃহাস্থ্যলীর কোনো ধরনের কাজ করতে অক্ষম হয়ে অবশেষে সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে শুরু করে। এটা বলা সঠিক হবে না যে সে এখন পরিপূর্নভাবে তার উপসর্গ থেকে মুক্ত, কারণ তার মনে কোনো অবসেশন বা আচ্ছন্নতা আসতে পারে। তবে, সে এখন “তা নিয়ে রসিকতা করে”; সংক্ষেপে, বৈপরিত অভিপ্রায় প্রয়োগে।

নিদ্রা ব্যাঘাতের ক্ষেত্রেও Paradoxical intention বা বৈপরিত অভিপ্রায় প্রয়োগ করা যেতে পারে।

নিদ্রহীনতার[4] ভয় ঘুমিয়ে পড়ার বেলায় hyper-intention বা অত্যধিক-অভিপ্রায়ে রূপ নেয়, যা, পক্ষান্তরে, রোগীকে ঘুমিয়ে পড়ায় অক্ষম করে তোলে। এই বিশেষ ভয়কে অতিক্রম করতে, আমি সাধারণত রোগীকে ঘুমি পড়ার চেষ্টা না করে বরং ঠিক উল্টোটা করার, মানে যতটা সম্ভব জেগে থাকতে চেষ্টা করার উপদেশ দেই। অন্য অর্থে, ঘুমাতে না পারার anticipatory anxiety বা পূর্বাভাসজনি উদ্বেগ বা আশংকা থেকে সৃষ্ট ঘুমিয়ে পড়ার hyper-intention বা অত্যধিক-অভিপ্রায়কে অবশ্যই ঘুমিয়ে না পড়ার Paradoxical intention বা বৈপরিত অভিপ্রায় দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে হবে, যা দ্রুত ঘুম নিয়ে আসবে।

Paradoxical intention বা বৈপরিত অভিপ্রায় সব ধরনের রোগ নিরাময়কারী ওষুধ নয়। মাত্রাতিরিক্ত বাধ্যকরণক্ষম স্নায়ুবৈকল্য ও ফোবিক অবস্থা, বিশেষ করে anticipatory anxiety বা পূর্বাভাসজনি উদ্বেগ জনিত রোগের চিকিৎসায় দরকারী উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অধিকন্তু, এটি হলো সংক্ষিপ্ত মাত্রার থেরাপিউটিক কৌশল। যাহোক, কারো এটা ভাবা উচিৎ নয় যে এরকম এক সংক্ষিপ্ত সময়ের থেরাপি অবশ্যম্ভাবিভাবে কেবল ক্ষণস্থায়ী থেরাপিউটিক ফলাফলে রুপান্তরিত হবে। “ফ্রয়ডিয় প্রচলিত প্রথার এক সাধারণ ভ্রম হলো”, আমেরিকার প্রয়াত মনঃচিকিৎসক এমিল আর্থার গোটেইলের উদ্বৃতিতে, “যে ফলাফলের স্থায়িত্বের সাথে থেরাপির ব্যপ্তির সাথে সঙ্গতি রয়েছে”।[5] আমার নথিতে, উদহারণ হিসেবে, এমন এক রোগীর বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে যার কাছে বিশ বছরেরও বেশি আগে paradoxical intention বা বৈপরিত অভিপ্রায়  প্রয়োগ করা হয়েছিল; তা সত্ত্বেও, থেরাপিউটিক প্রভাবের স্থায়ীত্ব প্রমানিত হয়েছে।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হলো যে paradoxical intention বা বৈপরিত অভিপ্রায় সংশ্লিষ্ট ঘটনার etiological বা কারণতত্ত্বগত ভিত্তি নির্বিশেষে কার্যকর। আর তা একদা ইডিথ ওয়েসকপফ-জোয়েলসন কর্তৃক করা এক বিবৃতিকে নিশ্চিত করে: “যদিও প্রচলিত মনঃচিকিৎসা জোর দিয়ে বলে যে থেরাপিউটিক অনুশীলন হতে হবে রোগের কারণতত্ত্বের অনুসন্ধানের পর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে, এটি সম্ভব যে নির্দিষ্ট কোনো উপাদান শিশু বয়সে স্নায়ুবৈকল্য সৃষ্টি করতে পারে এবং সম্পূর্ণভাবে আলাদা কোনো উপাদান প্রাপ্ত বয়সে স্নায়ুবৈকল্যের উপশম হতে পারে”। [6]

স্নায়ুবৈকল্যের প্রকৃত সংশ্লিষ্ট কারনের ক্ষেত্রে, কাঠামোগত উপাদান ব্যতীত, হোক তা স্বভাবে শারিরীক বা মানসিক, anticipatory anxiety বা পূর্বাভাসজনি উদ্বেগ হিসেবে ফিডব্যাক মেকানিজমকে একটি প্রধান pathogenic বা রোগের কারণ হতে পারে এমন উপাদান বলে মনে হয়। ভয় বা ফোবিয়ার মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট উপসর্গের প্রতি সাড়া দেওয়া হয়, যে ভয় উপসর্গের সূত্রপাত করে, আর উপসর্গ পর্যায়ক্রমে ভয়কে জোরদার করে। একই ধরনের কোনো ঘটনাক্রম কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত বাধ্যকরণক্ষম বা obsessive-compulsive বৈকল্যের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা যায় যেখানে রোগী তাকে হানা দেওয়া বা বারংবার ফিরে আসা ধারনার সাথে সংগ্রাম করে করে[7]। যার ফলে, সে তাকে বিশৃঙ্খল করার জন্য তাদের শক্তিকে বৃদ্ধি করে, কারণ মানসিক চাপ counter-pressure বা বিপরীত মাননিক চাপকে ত্বরান্বিত করে। আবারও, উপসর্গকে জোরদার করা হয়! অন্যদিকে, রোগী যখনই তার অবসেশন বা আচ্ছন্নতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম থামিয়ে দেয় এবং শ্লেষপূর্ণ উপায়ে তাদের মোকাবিলা করার মাধ্যমে আচ্ছন্নতাকে উপহাস করার চেষ্টা করে – বৈপরিত অভিপ্রায় প্রয়োগের মাধ্যমে – তাহলে দুষ্টচক্রকে ছেদ করা হয়, উপসর্গের হ্রাস পায় এবং অবশেষে ক্ষয় হয়ে যায়। উপসর্গের আমন্ত্রন ও উদব্রেগ করে এমন অস্তিত্ত্বগত শুন্যতাহীন সৌভাগ্যজনক ঘটনায়, রোগী তার স্নায়ুবৈকল্যজনিত ভয়কে উপহাস করায় সফল হবে না তবে অবশেষে সম্পুর্নরুপে তাকে উপেক্ষা করায় সফল হবে।

আমরা যেমনটি লক্ষ্য করি, anticipatory anxiety বা পূর্বাভাসজনি উদ্বেগকে paradoxical intention বা বৈপরিত অভিপ্রায়ের মাধ্যমে ব্যর্থ করতে হবে; অত্যধিক-অভিপ্রায় বা hyper-intention ও অত্যধিক-প্রতিফলনকে বিপ্রতিফলন de-reflection বা দিয়ে প্রতিহত করতে হবে; তবে, শেষপর্যন্ত রোগীর জীবনকে বিশেষ বৃত্তি ও লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত হওয়া ছাড়া de-reflection বা বিপ্রতিফলন সম্ভব নয়[8]

স্নায়ুবৈকল্য রোগীর আত্ম-উদ্বেগ নয়, হতে পারে অনুকম্পা বা ঘৃনা, যা প্রক্রিয়া গঠনে বিঘ্ন ঘটায়; আত্ম-সীমাতিক্রমী শক্তিই হলো সুস্থতার সূত্র!

সমষ্টিগত স্নায়ুবৈকল্য (THE COLLECTIVE NEUROSIS)

প্রতিটি বয়সেই তার নিজস্ব সমষ্টিগত স্নায়ুবৈকল্য রয়েছে, আর প্রতিটি বয়সই তার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য এর নিজস্ব মনোঃচিকিৎসার দরকার হয়। বর্তমান সময়ের গণ-স্নায়ুবৈকল্য হচ্ছে অস্তিত্ত্বের শুন্যতা যাকে একান্ত ও ব্যক্তিগত নাস্তিবাদের আকার হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে, কারণ নাস্তিবাদকে সত্তা বা অস্তিত্ত্বের কোনো অর্থ নাই যুক্তিতে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। যাহোক, সাইকোথেরাপি বা মনোঃচিকিৎসার ক্ষেত্রে এটি এ বৃহত্তর পরিস্থিতির সাথে কখনও ঠিকে থাকতে পারবে না যদি না তা সমসাময়িক নাস্তিবাদ দর্শনের প্রবণতার প্রভাব ও প্রতাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে; অন্যথায় তা এর সম্ভাব্য নিরাময়ের চেয়ে বৃহৎ স্নায়ুবৈকল্যের উপসর্গকে উপস্থান করে। সাইকোথেরাপি বা মনোঃচিকিৎসা কেবল নাস্তিবাদী দর্শনকে প্রতিফলিত করবে তা না, কিন্তু, যদিও অনিচ্ছাকৃতভাবে ও অজ্ঞাতসারে, প্রকৃতপক্ষে কোনো মানুষের সত্যিকারের চিত্রেরের চেয়ে এক ব্যঙ্গচিত্রকেও রোগীর কাছে সঞ্চারিত করবে।

সর্বাগ্রে, মানুষের “nothingbutness” বা ‘কিছুনাবরংত্ব’ এর মাঝে এক সহজাত বিপদ রয়েছে, এমন এক থিওরী বা তত্ত্ব যা মানুষকে জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিক পরিস্থির ফল, বা বংশগতি আর প্রতিবেশের উৎপন্নদ্রব্য ব্যতীত কিছুই মনে করে না। মানুষের এহেন দৃষ্টিভঙ্গি একজন স্নায়ুবৈকল্য ব্যক্তিকে তার যা বিশ্বাস করার প্রবণতা রয়েছে তা বিশ্বাস করতে বাধ্য করে, যেমন, তার বিশ্বাস যে সে দাবার বড়ে এবং বাহ্যিক প্রভাবের বা আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির শিকার। এই স্নায়ুবৈকল্যগত অদৃষ্টবাদকে, মানুষ যে মুক্ত তা বিশ্বাস করতে অস্বীকৃতি জানায় এমন সাইকোথেরাপি দ্বারা লালিত এবং জোরদার করা হয়।

নিশ্চয়, একজন মানুষ এক সসীম সত্ত্বা, এবং তার স্বাধীনতাও সীমিত। পরিস্থিতি থেকে এ স্বাধীনতা নয়, বরং পরিস্থিতির প্রতি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এ স্বাধীনতা। আমি যেমন এক সময় বলেছিলাম: “স্নায়ুবিজ্ঞান ও মনোচিকিৎসা ক্ষেত্রের একজন প্রফেসর হয়ে আমি যথাযথভাবে জানি মানুষ কতটুকু জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিক পরিস্থিতির মুখাপেক্ষি। কিন্তু দু’টি ক্ষেত্রের একজন প্রফেসর হওয়ার পাশাপাশি আমি চারটি বন্দী শিবির থেকে বেঁচে আসা একজন মানুষ এবং একইভাবে অপ্রত্যাশিত মাত্রায় মানুষ এমনকি অনুমেয় সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিকে অস্বীকার এবং মোকাবিলা করতে কতটুকু সক্ষম আমি তারও সাক্ষী বহন করি[9]

প্যান-পরিনামবাদের সমালোচনা (Critique of Pan-Determinism)

মনঃসমীক্ষণ প্রায় সময় তথাকথিত প্যান-যৌনতা হিসেবে সমালোচিত হয়েছে। আমি নিজেও এই নিন্দা বৈধ ছিল কিনা তা সন্দেহ করি। যাহোক, আমার কাছে এমনকি আরও বেশি এক ভ্রান্ত ও বিজ্জনক ধৃষ্টতা রয়েছে বলে মনে হয়, যেমন, যাকে আমি প্যান-পরিনামবাদ বা Pan-Determinism বলে আখ্যায়িত করি। তাতে আমি মানুষের এমন দৃষ্টিভঙ্গিকে বোঝায় যা যেকোনো পরিস্থিতিতে তার পদক্ষেপ নেওয়ার সামর্থকে উপেক্ষা করে। মানুষ সম্পূর্ণভাবে শর্তযুক্ত এবং নির্ধারিত নয় বরং সে পরিস্থিতির প্রতি নিজেকে সপে দেবে কিনা বা তাতে স্থির হয়ে দাঁড়াবে কিনা তার নির্ধারন করে। অন্য অর্থে, মানুষ শেষ পর্যন্ত আত্ম-নির্ধারণকারী। মানুষ কেবলই ঠিকে বা বেঁচে থাকে তা নয় কিন্তু সে সময়ই তার অস্তিত্ব বা বেঁচে থাকা কি হবে, পরবর্তী মুহুর্তে সে কি হয়ে উঠবে তার সিদ্ধান্ত নেয়।

একই নিশ্চয়তার মাধ্যমে, যে কোনো ক্ষণে পরিবর্তীত হওয়ার স্বাধীনতা মানুষের রয়েছে। তাই, এক পূর্ণাঙ্গ দলের উপর কেবল এক পরিসংখ্যানগত জরিপের উল্লেখ করে বৃহৎ কাঠামোর ভেতর দিয়ে আমরা তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি; যদিও স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব মূলত ভবিষ্যদ্বাণীর বাইরে রয়ে যায়। যেকোনো ভবিষ্যদ্বাণীর ভিত্তিকে জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক বা সমাজতাত্ত্বিক পরিস্থিতির দ্বারা তুলে ধরা হবে। তবুও, মানুষের অস্তিত্ত্বের বা জীবনের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এহেন পরিস্থিতির উর্ধে উঠার তার ক্ষমতা, তার উর্ধে বেড়ে উঠা।  সম্ভব হলে পৃথিবীকে ভালোর জন্য পরিবর্তনে সক্ষম মানুষ, এবং দরকার হলে নিজেকে ভালোর জন্য পরিবর্তন করতে সক্ষম।


[1] New York, The Macmillan Co., 1956, p. 92.

[2] Writer’s cramp হলো এক বিশেষ ধরনের অধিশ্রয়ণিক ব্যাধি বা নাড়াচাড়া করার ব্যাধি যা আপনার আঙ্গুল, হাত, বাহুকে আক্রান্ত করে। হাতের অধিশ্রয়ণিক ব্যাধি হলো এক স্নায়ুবিক নাড়াচাড়া ব্যাধি। 

[3] বাধ্যবাধকতামূলক (হাত) ধৌতকরণ ব্যাধিতে ভোগা লোকেরা মাত্রাতিরিক্ত ও পুনরাবৃত্তিমূলকভাবে সংক্রমনের অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক ভয়ের সাথে সম্পৃক্ত তীব্র যন্ত্রনা থেকে মুক্তির প্রচেষ্টায় হাত ধোয়া সম্পাদন করে।

[4] অধিকাংশ ক্ষেত্রে, নিদ্রাহীতার ভয়, প্রাণী যে নিজেকে নিজে সর্বনিম্ন পরিমানের প্রকৃত পক্ষে প্রয়োজনীয় ঘুম সরবরাহ করে সে সম্পর্কে রোগীর অজ্ঞতার কারণেই হয়ে থাকে।

[5] American Journal of Psychotherapy, 10(1956), p. 134.

[6] ভিয়েনার মনঃচিকিৎসা ধারার উপর কিছু মন্তব্য (Some Comments on a Viennese School of Psychiatry)

[7] এটি প্রায়শই রোগীর ভয়ের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয় যে তার অবসেশন কোনো আসন্ন বা এমনকি প্রকৃত মনঃবৈকল্যকে নির্দেশ করে; রোগী প্রায়োগিক বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয় যে obsessive-compulsive neurosis বা মাত্রাতিরিক্ত বাধ্যকরণক্ষম স্নায়ুবৈকল্য কোনো আনুষ্ঠানি মনোবৈকল্যর বিরুদ্ধে তাকে এই দিকে বিপদগ্রস্ত করার চেয়ে অনাক্রম্য করছে।

[8] এই বিশ্বাসকে এ্যাপোর্ট সমর্তন দিয়েছেন যিনি একদা বলেছিলেন, “লড়ায়ের লক্ষ্য যখন সংঘাত থেকে স্বার্থহীন উদ্দেশ্যে পরিবর্তন হয়, জীবন তখন সামগ্রিকভাবে আরও সুন্দর হয়ে উঠে এমনকি যদিও স্নায়ুবৈকল্য কখনও সম্পুর্ণভাবে উদাও নাও হতে পারে” (op. cit., p. 95)।

[9] “Value Dimensions in Teaching,” a colour television film produced by Hollywood Animators, Inc., for the California Junior College Association.

Romzanul Islam

Thinking out of the convention and moving forward with knowledge and reasons are always my styles. Researching, watching the best films, and reading and collecting the best books to enrich me is my deadly passion. Stoicism, liberalism, feminism and aversion to material success are my ideals.